খাইরুল ইসলাম, ঝালকাঠি: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ‘আন্তর্জাতিক তৃতীয় পিঠস্থান’ ঝালকাঠির শিববাড়িতে চলছে ঐতিহ্যবাহী শিব চতুর্দশীর মেলা।
সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের শিববাড়ি গ্রামে শনিবার শুরু হওয়া তিন দিনের এ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পুণ্যার্থী অংশ নিচ্ছেন।
মেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অসীম কুমার সাহা বলেন, “হিন্দুদের আন্তর্জাতিক এই তৃতীয় পিঠস্থানে প্রতি বছর শিব চতুর্দশী উপলক্ষে মেলা বসে। মেলার প্রধান পর্ব দেবতা শিবের উপাসনা।
“এক সময় নেপাল-ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকেও পুণ্যার্থী আসত। তখন মাসব্যাপী মেলা জমত। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হত। এখন আর আগের দিনের মতো নেই। পরিসর অনেক কমে গেছে। তবে এ বছর ৫০ হাজারের মতো পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে বলে ধারণা করছি।”
মেলায় গ্রামীণ সংস্কৃতির সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে। দোকানে দোকানে মিষ্টি, পান-সুপারি পাওয়া যাচ্ছে। মেয়েদের প্রসাধনীর পসরা সাজিয়ে বসেছে অনেকে। নাগরদোলা আর শিশুদের খেলনা তো আছেই।
মেলায় আসা অনেকেই বিশেষ উদ্দেশ্যে শিবের পূজা করছেন। নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায়, কুমারীরা আকাক্সিক্ষত বর প্রত্যাশায় ফুল-জলসহ নানা মাঙ্গলিক উপাদানে নৈবেদ্য সাজিয়ে দেবতা শিবকে সন্তুষ্ট করছেন। অপরদিকে শিশুর মঙ্গলের জন্য মায়েরা এসেছেন মানত নিয়ে।
ঢাকার উত্তরা থেকে সপরিবার এসেছেন সঞ্জিত কুমার হালদার। মেয়ে, স্ত্রী ও শিশুছেলের সঙ্গে এনেছেন প্রতিবেশীদেরও।
তার মেয়ে সম্মান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অধিলক্ষী হালদার বলেন, “ছোটবেলা থেকে পিসি, বড় বোনসহ আত্মীয়-স্বজনকে এই উৎসব উদযাপন করতে দেখে আসছি। আমি আজ সকাল থেকে উপবাস করছি, শিবের ব্রত পালন শেষে উপবাস ভাঙব।” যোগ্য বর প্রত্যাশায় শিব ঠাকুরকে নৈবেদ্য দিতেই এত দূর এসেছেন বলে জানান অধিলক্ষী।
“ছেলের জন্য শিববাড়িতে মানত ছিল। তাই এ উৎসবে ওর চুল কেটে ন্যাড়া করে মানতি পালন করলাম।” বলছেন ফরিদপুর থেকে শিশুছেলেকে নিয়ে আসা ইন্ধুশ্রী সাহা। সাথে আছেন তার আত্মীয়-স্বজনও।
কেউ কেউ এসেছেন নিছক মেলা উপভোগের জন্য। স্বরুপকাঠি থেকে আসা এমন একদল তরুণের সাথে কথা হল। তাদের একজন মো: কাইউম, “অনেক দিন ধরে প্রতিবেশীদের কাছে এ মেলার কথা শুনে আসছি। এত বড় আর এমন উৎসবমুখর মেলা আমি আর কোনো দিন দেখিনি।”
মেলা ভাঙবে সোমবার সন্ধায়।