মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় শাহ আমানত ফেরি ডুবির ঘটনায় দুই দিনে মোট ১১টি যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ছয়টি কাভার্ডভ্যান, চারটি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল।
সরেজমিন
দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায়
ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও বিআইডব্লিউটিএর সদস্যরা
পাটুরিয়ার ৫ নম্বর পল্টুনে
উদ্ধার অভিযানে নামে। সাড়ে তিন ঘণ্টা
চেষ্টার পর ডুবে যাওয়া
ফেরি থেকে একটি কাভার্ডভ্যান
উদ্ধার করা হয়।
এরপর
তারা দুর্ঘটনার দিন ফেরি থেকে
ভেসে যাওয়া ৫ নং ঘাটের
১৫০ মিটার পূর্বে ডুবন্ত পাঁচটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার করে। দুর্ঘটনার দিন
উদ্ধারকারীরা চারটি ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল
উদ্ধার করে। উদ্ধারকারী জাহাজ
হামজার সহযোগিতায় এই কার্যক্রম চালানো
হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে
দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান
শেষ করা হয়।
কাভার্ডভ্যান
মালিক হারুন উর রশিদ জানান,
বুধবার সকাল ৮টার দিকে
গাড়িচালক ফোন করে আমাকে
জানায় তারা দৌলতদিয়া থেকে
ফেরিতে উঠেছে। ২০/২৫ মিনিট
পরই আবার ফোন করে
বলে আমরা খুব বিপদে
আছি। ফেরিটি উল্টে যাচ্ছে এবং ফেরিতে থাকা
সব যানবাহন নদীতে পড়ে গেছে। যে
যার মতো জীবন বাঁচানোর
জন্য নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে। আমার
গাড়িটি ওই ফেরির পেছনে
দিকে ছিল। ফেরিটি যখন
ডুবে যায়, তখন চালক
গাড়িটি রেখে কোনোমতে তার
জীবনরক্ষা করে।
তিনি
আরো জানান, গাড়ি কেনার সময়
১২ লাখ টাকা লোন
করেছি । গাড়ির আয়
দিয়ে এই লোনের কিস্তি
দেই আর সংসার চালাই।
পাটুরিয়ায় ফেরি উল্টে যাওয়ার
পরে আমার দুটি গাড়ি
ভেসে যায় প্রায় আধা
কিলোমিটার দক্ষিণে। ২৪ ঘণ্টা ধরে
পানির নিচে রয়েছে আমার
৮০ লাখ টাকা মূল্যের
দুটি গাড়ি।
ট্রাকচালক
ওমর আলী জানান, দৌলতদিয়া
থেকে যখন ফেরিটি লোড
করা হচ্ছিল তখনই ফেরির ডানপাশ
কাত ছিল। আমি কর্তৃপক্ষকে
বার বার বলি ফেরিতে
কি কোন সমস্যা আছে
নাকি। তারা জানায়, ফেরিতে
কোন সমস্যা নেই। মাঝপথে আসার
পর দেখি ফেরিতে পানি
উঠেছে। এমন করে ৫
নাম্বার ঘাটে আসার পরই
দেখি ফেরির অবস্থা আরো খারাপ।
তিনি
আরো বলেন, আমার গাড়িটা ছিল
ডানপাশে পেছনের এক গাড়ির সামনে।
পল্টুনে ভেড়ার পর তিনটা গাড়ি
নামার পরই কয়েক সেকেন্ডের
মধ্যেই ফেরিটির ডানপাশ ডুবে উল্টে যায়।
আমি নদীতে লাফ দেই। পরে
দুই তিনজন আমাকে উদ্ধার করে।
দুর্ঘটনার
শিকার ট্রাকের মালিক ও চালকরা জানান,
এসব ফেরি ঝালাই করা,
ইঞ্জিন নষ্ট। ফেরির মাস্টার ও ফেরি মেরামত
ঠিকভাবে না করার জন্যই
এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
বিআইডব্লিউটিএর
যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) ফজলুর রহমান জানান, ১৭টি কাভার্ডভ্যান-ট্রাক
এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে শাহ আমানত
পাটুরিয়ায় এসে কাত হয়ে
ডুবে যায়। এসময় তিনটি
ট্রাক তীরে উঠতে পারলেও
১৪টি কাভার্ডভ্যান, ট্রাক এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল
ডুবে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই
পাঁচটি কাভার্ডভ্যান ভেসে কিছুদূর গিয়ে
ড্রেজারের পাইপের সঙ্গে আটকে যায়। দুই
দিনে ছয়টি কাভার্ডভ্যান, চারটি
ট্রাক ও একটি মোটরসাইকেল
উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে
যাওয়া ফেরিতে এখনো চারটি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান রয়েছে বলে ডুবুরিরা নিশ্চিত
করেছেন।
তিনি
আরো জানান, ফেরিতে থাকা ট্রাকগুলো উদ্ধার
করা হয়ে গেলেই আমরা
যানবাহন উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করব। আর ডুবে
যাওয়া ফেরিটি উদ্ধার করতে জাহাজ হামজা
সক্ষম নয়। নারায়ণগঞ্জ থেকে
আসা উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সহযোগিতায় যদি ফেরিটিকে উঠানো
না যায়, তাহলে বেসরকারিভাবে
ভাড়াকৃত উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে ফেরিটি উঠানোর
চেষ্টা করা হবে।
জেলা
প্রশাসক আব্দুল লতিফ জানান, উদ্ধার
অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য
বুধবারই নারায়ণগঞ্জ থেকে রওনা হয়েছে
উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। তবে বৃহস্পতিবার রাতের
মধ্যে সেটি আসার সম্ভাবনা
রয়েছে। এই দুর্ঘটনায় কোন
হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
স্বজন হারিয়ে গেছে এমন দাবিতেও
কাউকে ঘাটে আসতে দেখা
যায়নি।
এদিকে
দেশের অন্যতম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২০টি ফেরির মধ্যে
বেশিরভাগ ফেরিই দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদউত্তীর্ণ। এদের
মধ্যে ৮/৯টি ফেরির
বয়স ৩০ বছরেরও উপরে।
বিআইডব্লিউটিসি
আরিচা কার্যালয়ের ডিজিএম জিল্লুর রহমান জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচলকারী ফেরির
বয়স অনেক। তারপরও সেবা কার্যক্রম ঠিক
রাখার জন্য জরাজীর্ণ এই
ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে যানবাহন। ফেরির অবস্থা দেখে প্রধানমন্ত্রী হাতে
একটি প্রকল্প নিয়েছেন। আমরা আগামী জানুয়ারির
মধ্যে ১২টি ফেরি পেয়ে
যাব।