আজ ১৫ আগষ্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের দিন। কলঙ্কের দিন। জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ৪৬ বছর পার হলো। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি কেবল বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেনি, তারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এই বিচারের পথ বন্ধ করে রেখেছিল। এভাবে আইন করে বিচার বন্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এক নজীরবিহীন ঘটনা। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট এমন একজন মহামানবকে হত্যা করা হয়, যিনি সারাজীবন বাঙালির জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা তাই ইতিহাসে নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতার দলিল। এই হত্যার দায় কেবল কতিপয় খুনীর নয়, সমগ্র বাঙালি জাতির।
বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এই হত্যাকান্ডের স্বরূপ উন্মোচন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার মাধ্যমেই এই জাতি বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে পারে। কিন্তু এখনও আমরা এই ঋণ শোধ করতে পারিনি। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। এরপর শুরু হয় ইতিহাসের দায়মোচন পর্ব। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার শুরু হয়। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে শেষপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়। অধিকাংশ খুনীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এখনও বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনীর বিরুদ্ধে রায় কার্যকর করা যায়নি। তারা বিদেশে পালিয়ে আছে। এদের বিদেশ থেকে এনে, রায় কার্যকর না করলে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ হবে না।
জাতির পিতার হত্যার বিচার হয়েছে কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উন্মোচন হয়নি। এই হত্যাকান্ডের নেপথ্যে কারা তা খুঁজে বের করা হলো আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। এই ষড়যন্ত্রের মূল উৎপাটন না করতে পারলে, আমরা জাতির পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে পারবো না। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো সোনার বাংলা। অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্ম মর্যাদাশীল একটি জাতিরাষ্ট্র বিনির্মাণন করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু এখনও আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারি নাই। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ, শোষনমুক্ত বাংলাদেশ, সাম্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণের মধ্যে দিয়েই আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে পারি।
জাতীয় শোক দিবসে আমাদের শপথ নিতে হবে, যেন আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে পারি।