ডিএনএন ডেস্ক: দার্শনিক, সমাজসংস্কারক, ওলীয়ে কামেল, জ্ঞানতাপস, শান্তিকামী-মুক্তিকামী কায়েদ ছাহেব কেবলা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর মানুষের কাছে মেধা ও মননের প্রতীক হিসেবে বরিত এই মহামানবের সহধর্মিণী গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারী-২০২১) সন্ধা ০৬টা ০৪ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। ইন্না-লিল্লাহে অইন্না-ইলাইহে রাজেউন!
মরহুমার
জানাজা নামাজ গতকাল সন্ধ্যা
৭:০০ ঘটিকায় নেছারাবাদ
সিদ্দীকীয়া ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়।
তাঁর
অসিয়ত ও কঠোর নিষেধাজ্ঞার
কারণে মাইকিং ও পত্রপত্রিকায়
শোকসংবাদ-জাতীয় কোনো খবর
আনুষ্ঠানিকভাবে আদৌ জানানো না
হলেও এতদসত্ত্বেও ঝালকাঠির নেছারাবাদ দরবারে সঙ্গত কারণেই
গতকাল মানুষের ঢল, বিশেষ করে
সর্বশ্রেণীর মহিলাদের যে বাঁধভাঙা জোয়ার
নেমেছিল তা রীতিমতো বিস্ময়ের
ব্যাপার!
তিনি
কোনো নারীনেত্রী কিংবা নারী-অধিকারের
প্রবক্তা ছিলেননা, ছিলেন কেবল একজন
মর্দেমুজাহিদের অন্তঃপুরবাসিনী স্ত্রী--যিনি বেগানা পুরুষ
তো দূর এই অন্তঃপুরবাসিনীর
জন্য নারীসমাজের এত্তো-এতো আবেগ
আর টান-ভালোবাসার কারণ
কি ওরা, ওই নারী-অধিকারের নামে রাস্তা-চাপড়ানো
মেম-ম্যাডামরাই শুধু উপলব্ধি করবেন?
ছাত্রজীবনেই
কায়েদ ছাহেবের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল
উপমহাদেশের কানায়-কানায়।
বাড়ি-গাড়ি, অর্থ-বিত্তের
পাহাড় নিয়ে মেয়ের বাবারা
যখন কায়েদ ছাহেবকে জামাই
বানানোর প্রতিযোগিতায় মত্ত, নির্মোহ কায়েদ
ছাহেব তখন সাফ জানিয়ে
দিলেন যে, তাঁর বিয়ের
শর্ত ০৫টি।--১.
তাকওয়া ও দ্বীনদারী, ২.
এলমেদ্বীন শিক্ষা, ৩. বংশীয় মর্যাদা,
৪. রূপ-সুরত, ৫.
ধনসম্পদ; তবে ৪র্থ ও
৫ম শর্ত শিথিলযোগ্য।
সুতরাং তিনি খুব উঁচু
ও ধনী ঘরের মেয়ে
বিয়ে করতে চান না। এমন
একটি পরহেযগার ও দ্বীনদার মেয়েকে
বিয়ে করতে চান যে
আন্তরিকভাবে তাঁর মায়ের খেদমত
করবে। এমন
মেয়ে গরীব ঘরের হলেও
তাঁর আপত্তি নেই।
আল্লাহ
তায়ালা যাঁকে দ্বীনের জন্য
কবুল করেন তাঁর সমুদয়
কার্যের ব্যবস্থাপক তো তিনি নিজেই
হয়ে যান। তাই
বেগ পেতে হলো না
একটুও, বরিশাল-বানারীপাড়ার সোনাহার
গ্রাম নিবাসী সর্বজন-শ্রদ্ধেয়
সূফী গিয়াস উদ্দীন রহ.-এর মেজকন্যা মুহতারিমা
উম্মুল খায়ের হুজুরের সহধর্মিনীর
মর্যাদা নিয়ে নেছারাবাদ এলেন
১৯৪৩ সালের কোনো এক
শুভক্ষণে।
যেমন
নাম তেমন তার বরকত। উম্মুল
খায়ের-কল্যাণের মা। হ্যাঁ,
কায়েদ ছাহেবের আরাধ্য ০৫ শর্তের
পূর্ণ সমাবেশই ঘটেছিলো তাঁর মধ্যে।
তাঁর তাকওয়া-পরহেযগারীর অনন্যতার
কারণে কায়েদ ছাহেব এতোটাই
সন্তুষ্ট ছিলেন যে, সংসারজীবনে
তাঁর সততা, সহিষ্ণুতা, অল্পেতুষ্টতা
ও স্বামীর আনুগত্যতাকে সকল স্ত্রীদের জন্য
অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করতেন।
মৃত্যুকালে
তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক
৯৬ বছর। দেশেবরেণ্য
চিন্তাবিদ ও সমাজসংস্কারক, আমীরুল
মুছলিহীন হযরত নেছারাবাদী হুজুর
তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তান, রয়েছে ৩ বিদুষী
কন্যা-জামাতা এবং জাতীয়
ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতিমান দৌহিত্রবর্গসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন
ও গুণগ্রাহী।
ডিএনএন টোয়েন্টিফোর হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুর রহ.-এর ছায়াদার এই মহীয়সী নারীর জান্নাতে উঁচু মাকাম কামনা করছে। আমীন!