দিনের পর দিন বিপজ্জনক উঠছে ডেঙ্গু। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের এই সংক্রমণের মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় চিন্তিত সবাই। দেশে গত জুলাই থেকে চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গুজ্বর। আগস্টে এসে আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত জুলাই মাসে মারা গেছে ১২ জন, আগস্টে এ পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ অবস্থায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে আগাম সতর্কে ডেঙ্গু প্রতিরোধে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা মহামারীর মধ্যেও প্রতিদিন প্রায় ২৫০ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭০ জন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি ২৪০ জন, বাকিরা রাজধানীর বাইরে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১ হাজার ২৩৮ জন, এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১৪৫ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে জুলাইতে ১২ জন, আগস্টে ১৯ জন।
করোনা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। এর মধ্যে নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় চারটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও চলছে চিকিৎসা। কিন্তু সে হাসপাতালগুলোতেও রোগী সংকুলান হওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৩৭ জন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ১ হাজার ১০৬ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৩০৪ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাতজন, বিএসএমএমইউ-তে ৯৩ জন, পুলিশ হাসপাতালে একজন, বিজিবি হাসপাতালে নয়জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৬৪ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আটজন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ৮২৯ জন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫ হাজার ৬ জন।
শিশুদের জন্য ভয়ংকর হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক শফি আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন প্রায় ১০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে অনেক শিশু আসছে।
শিশুদের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু বেশি বিপজ্জনক। করোনায় শিশুদের মাইল্ড সিম্পটম হয় এবং তাদের ঝুঁকিটা কম থাকে। কিন্তু ডেঙ্গু শিশুরা অনেক ঝুঁকিতে থাকে। শিশুদের শরীরে কামড়াতে মশার সুবিধা হয়। প্রায় বিনা বাধায় শিশুর পাতলা চামড়া ভেদ করে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা কামড়ায়। মশার কামড় থেকে বাঁচাতে মশারির পাশাপাশি ক্রিম ও রিপেলেন্ট মাখানো যেতে পারে।’ অনেক রোগী ডেঙ্গুর পাশাপাশি একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। এ জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘জ্বরের সঙ্গে শরীরে প্রচ- ব্যথা থাকলে অবশ্যই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা তা টেস্ট করে দেখতে হবে। এ সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ট্যাবলেট খাওয়া যাবে না। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। করোনা ও ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় সবাইকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনেকে একই সময়ে দুই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের উচিত হবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা।’
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, নিজেদের সুস্থতার জন্য সবাই মিলে, ‘১০টায় ১০ মিনিট প্রতি শনিবার, নিজ নিজ বাসাবাড়ি করি পরিষ্কার’ স্লোগানটিকে বাস্তবায়ন করতে হবে।