গত বুধবার সংগঠিত বরিশালের সহিংসতার ঘটনার পর এখন সমঝোতার চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কায়েকজন আমলা এই সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে মেয়রের নির্দেশে ময়লা-আবর্জনাগুলো আজ পরিস্কার করা হয়েছে। যদিও এখনও বরিশালে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। অন্যদিকে মেয়রের অনুসারীরা সেখানকার ইউএনও-ওসি এবং আনসারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এসবের সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, খুব শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং এটি যে `ভুল বোঝাবুঝি` হয়েছিল তার অবসান ঘটবে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, বরিশালের যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেই ঘটনাটি যেন আর না বাড়ে সেজন্য সরকার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ`র সঙ্গে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা কথা বলেছেন এবং তাকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য তাকে ফোন করে পদত্যাগ বা এ ধরনের বক্তব্য আপাতত না দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন এবং কোনরকম বিতর্কিত বক্তব্য থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইভাবে সরকারের প্রশাসন থেকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ইউএনও কেও কারো সাথে এই বিষয় নিয়ে কথা না বলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, দীর্ঘদিন ধরেই ইউএনও এবং প্রশাসনের সঙ্গে বরিশাল সিটি মেয়রের সমস্যা চলছিল। পুলিশ প্রশাসনের সাথেও সাদিক আব্দুল্লাহ`র দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। আর সেখান থেকেই এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে যে, এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা এ কথা অস্বীকার করেছেন। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর এলাকায় কোনো প্রভাব নেই এবং এ নিয়ে কোনো বিরোধও নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন যে, এমন একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে যে পরিস্থিতিতে যেন প্রশাসনকে এবং রাজনীতিবিদদের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়। বরিশালের স্থানীয়রা বলছেন যে, এই ঘটনাটি সহজেই মীমাংসা করা যেত। কিন্তু দুই পক্ষই তাদের পুরনো ক্ষোভ মেটানোর জন্য এই ঘটনাটিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছেন। পোস্টার লাগানো একটি তুচ্ছ ঘটনা ছিল। সেখানে আলাপ আলোচনা করেই বিষয়টি মীমাংসা করা যেতে পারতো।
কিন্তু যেহেতু ইউএনও এবং ওসির সঙ্গে সিটি মেয়রের সম্পর্ক ভালো না সেইজন্য সিটি মেয়রের লোকজনকে একহাত দেখে নেয়ার জন্য অতি উৎসাহী আনসাররা এবং পুলিশরা লঙ্কাকাণ্ড বাঁধিয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করেন। তবে এই ঘটনাটি যদি দীর্ঘায়িত হয় তাহলে সারাদেশে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এবং সারাদেশে প্রশাসনের সঙ্গে আমলাদের একটি দূরত্ব তৈরি হতে পারে। এটি সরকারের জন্য কাম্য নয়। তাছাড়া এই ঘটনা দীর্ঘায়িত হলে রাজনীতিবিদদের জন্যও এটি একটি জটিল সমীকরণের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ শেষ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে প্রশাসনকে সাথে নিয়েই। তাই সরকার এই ঘটনাটিকে আর বাড়তে না দিয়ে এখনই এটিকে সুরাহা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে কাজ চলছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হবে এবং এই সংকট কেটে যাবে। আওয়ামী লীগের অন্য একজন নেতা বলেছেন, দুই পক্ষই যদি কথা বলা বন্ধ করে তাহলে পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্তিমিত হবে। তবে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।